ইহুদি ও বনি ইসরাইলের মধ্যে পার্থক্য: আমরা অনেক সময় কথা বলার সময় “ইহুদি” আর “বনি ইসরাইল” শব্দ দুটি একে অপরের জায়গায় ব্যবহার করি। কিন্তু এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য আছে। এই পার্থক্যগুলো জানা খুবই দরকার, যাতে আমরা ইতিহাসকে ভালোভাবে বুঝতে পারি।
বনি ইসরাইলের সূচনা
বনি ইসরাইলের ইতিহাস শুরু হয় প্রায় ৪০০০ বছর আগে নবী ইব্রাহিম (আ.)-এর সময় থেকে। তিনি কানান নামে একটি অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন, যা এখনকার ফিলিস্তিন। তার দুই পুত্র ছিলেন—ইসমাঈল (আ.) ও ইসহাক (আ.)। আল্লাহ এই দুই পুত্রকেই প্রতিশ্রুতি দেন, তারা বড় জাতি হবে। ইসমাঈল (আ.) মক্কায় গিয়ে বসতি গড়েন, আর ইসহাক (আ.) কানানে থাকেন। ইসহাক (আ.) এর বংশ থেকেই পরে বনি ইসরাইল গড়ে ওঠে।
ইসহাক (আ.) এর ছেলে ইয়াকুব (আ.) বা ইসরাইলের বারোটি পুত্র ছিল। এদের থেকেই ইসরাইলের বারো গোত্রের জন্ম। ইয়াকুব (আ.) তার ছেলে ইউসুফ (আ.)-কে বেশি ভালোবাসতেন, তাই অন্য ভাইয়েরা ঈর্ষা করত। একসময় তারা ইউসুফ (আ.)-কে দাস হিসেবে মিসরে বিক্রি করে দেয়।
আরো দেখুন: সূরাতুন নাস এর শানে নুযুল
মিসরে বনি ইসরাইলের উত্থান
পরে ইউসুফ (আ.) মিসরের প্রধানমন্ত্রী (ভিজিয়ার) হন এবং দুর্ভিক্ষের সময় তার পরিবারকে মিসরে ডেকে নেন। এরপর বনি ইসরাইল মিসরে অনেক উন্নতি করে, তারা ব্যবসা ও চাষাবাদে সফল হয়। এই উন্নতি দেখে মিসরের ফেরাউন ভয় পেয়ে যায় এবং তাদের দাস বানিয়ে ফেলে।
চারশত বছর দাসত্বের পর, আল্লাহ মুসা (আ.)-কে পাঠান তাদের মুক্ত করার জন্য। মুসা (আ.) ফেরাউনকে সতর্ক করেন এবং শেষ পর্যন্ত বনি ইসরাইলকে মিসর থেকে বের করে এনে ফিলিস্তিনের দিকে নিয়ে যান।
প্রতিশ্রুত ভূখণ্ডের যাত্রা
ফিলিস্তিনের সীমানায় পৌঁছে, মুসা (আ.) তাদের সেখানে প্রবেশ করতে বলেন। কিন্তু তারা ভয় পায় এবং ভিতরে ঢুকতে চায় না। কারণ, এত বছর দাসত্বে থাকার ফলে তাদের মধ্যে সাহস কমে গিয়েছিল। এজন্য আল্লাহ তাদেরকে চল্লিশ বছর মরুভূমিতে ঘোরাফেরা করার নির্দেশ দেন, যাতে নতুন সাহসী প্রজন্ম তৈরি হয়।
চল্লিশ বছর পরে, মুসা (আ.)-এর উত্তরসূরি নতুন প্রজন্মকে নিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করে এবং দেশটি দখল করে।
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসি
বনি ইসরাইলের ইতিহাস ও উত্তরাধিকার
ফিলিস্তিন দখলের পর তারা নবীদের শিক্ষা অনুযায়ী সমাজ ও সরকার গঠন করে। কিন্তু তারা এক থাকেনি। একসময় তাদের রাজ্য দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়: ইসরাইল ও যিহুদা। ইসরাইল রাজ্য ছিল ১০ গোত্র নিয়ে, যা পরে আসিরিয়দের হাতে পতিত হয়। যিহুদা রাজ্য ছিল যিহুদা ও বেনিয়ামিন গোত্র নিয়ে।
নবীদের ভূমিকা
বনি ইসরাইলের ইতিহাসে অনেক নবী এসেছেন। যেমন, দাউদ (আ.) যিনি জেরুজালেম পুনর্দখল করেন, এবং তার ছেলে সুলায়মান (আ.) প্রথম মন্দির নির্মাণ করেন। কিন্তু সুলায়মান (আ.)-এর মৃত্যুর পর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যা দুই রাজ্যের পতনের কারণ হয়।
হারিয়ে যাওয়া দশ গোত্র
যুদ্ধ ও নির্বাসনের কারণে ইসরাইলের দশটি গোত্র হারিয়ে যায়, যাদের বলা হয় “হারিয়ে যাওয়া দশ গোত্র”। যিহুদা ও বেনিয়ামিন গোত্র বেঁচে থাকে, এবং আজকের ইহুদি জাতি এই দুটি গোত্র থেকেই গড়ে উঠেছে। অনেক জাতি দাবি করে তারা হারানো গোত্রের বংশধর, তার মধ্যে পশতুন জাতির দাবি বেশি আলোচিত।
More web: mrdeluofficial.com
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়
সমস্যা সত্ত্বেও বনি ইসরাইলের পরিচয় টিকে আছে। ইহুদি ধর্মে এই ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। তওরাত, আল্লাহর অঙ্গীকার এবং ভবিষ্যতের এক মসীহর আগমনের বিশ্বাস এই ধর্মের মূলভিত্তি।
পার্থক্য বোঝার গুরুত্ব
ইহুদি এবং বনি ইসরাইলের মধ্যে পার্থক্য বোঝা ইহুদি ধর্ম ও তাদের ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করে। এই পার্থক্য জানলে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে বনি ইসরাইলের ইতিহাস আজকের ইহুদি জাতিকে প্রভাবিত করেছে।
উপসংহার
শেষ কথা, “ইহুদি” আর “বনি ইসরাইল” শব্দ দুটি এক হলেও তারা আলাদা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করে। এই বিষয়টি বোঝা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন ও জ্ঞানী করে তোলে।
শেয়ার করুন ফেইসবুকে ও সোসিয়াল পেইজে
ইহুদি ও বনি ইসরাইলের পার্থক্য, ইহুদি ও মুসলিমদের আজানের মধ্যে পার্থক্য, ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য কী জেনে নিন, মুসলিম এবং ইহুদিদের মধ্যে পার্থক্য কি, ইহুদি ও মুসলমান পার্থক্য, ইহুদি ও খ্রিস্টান পার্থক্য, বনি ইসরাইলের ওয়াজ, বনি ইসরাইলের ইতিহাস, বনি ইসরাইলের কাহিনী, বনি ইসরায়েলের নাম ইহুদি হলো যেভাবে, ইহুদী ও মুসলিমদের মধ্যে মিল ও অমিল। পার্ট ৩, বনি ইসরাইলের গরুর ঘটনা, বনি ইসরাইলের ইতিহাস ওয়াজ, বনি ইসরাইলের সাথে ইসলামের সম্পর্ক কি, বনি ইসরাইল কারা, বনি ইসরাইল, বনি ইসরাইল কাকে বলে